
নতুন রিপাবলিক বলে জাতিকে যেন নতুনভাবেই বিব্রত করা না হয়:
লেখক: বাদশা সোলাইমান
তারিখ: ৩ মার্চ ২০২৫
৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষের মনে এক নতুন স্বপ্নের উন্মেষ ঘটেছে। তারা নতুন করে আশা করছে একটি শোষণমুক্ত, উন্নত ও স্বচ্ছ প্রশাসন। এই আকাঙ্ক্ষা একেবারে স্বাভাবিক, কারণ গণঅভ্যুত্থান ঘটে জনগণের অধিকারের পুনরুদ্ধার ও একটি কার্যকর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যদি কোনো চক্রান্তের মাধ্যমে নতুন রাষ্ট্র গঠনের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তবে তা জাতির জন্য এক বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
গণঅভ্যুত্থান এবং স্বাধীনতা – মৌলিক পার্থক্য:
একটি দেশ একবারই স্বাধীন হয়। যখন একটি দেশ স্বাধীনতা লাভ করে, তখন সেটির মানচিত্র, সার্বভৌমত্ব এবং সাংবিধানিক কাঠামো চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ যেমন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছিল। এই স্বাধীনতা একবারেই চূড়ান্ত ছিল। এরপর দেশ শাসনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, যা মূলত শাসকের পরিবর্তন, নীতির সংশোধন এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য হয়েছে।
কিন্তু গণঅভ্যুত্থানকে ব্যবহার করে যদি নতুন একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা করা হয়, তবে সেটি হবে দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এটি জাতির পরিচয়, সংবিধান, সংস্কৃতি ও সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হানবে।
নতুন সংবিধান বা সংস্কৃতি পরিবর্তনের চক্রান্ত:
গণঅভ্যুত্থানের নামে যদি কেউ নতুন সংবিধান, নতুন সংস্কৃতি কিংবা নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, তবে সেটি জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে করা হবে। বাংলাদেশের সংবিধান ইতিমধ্যে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটি পরিবর্তন করতে হলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণ করেই করা উচিত। কোনো গোষ্ঠী বা বিদেশি প্রভাবিত গোষ্ঠীর উসকানিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা দেশের জন্য মারাত্মক হবে।
প্রবাসী ইউটিউবারদের মদদে ষড়যন্ত্র:
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, কিছু প্রবাসী ইউটিউবার দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছে। তারা গণঅভ্যুত্থানের নামে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এই ইউটিউবাররা বহির্বিশ্ব থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু জনগণকে সচেতন থাকতে হবে যে, দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হলে তা দেশের অভ্যন্তরেই হবে, প্রবাসী কোনো গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নয়।
“ইনক্লাব জিন্দাবাদ” – আমাদের স্লোগান নয়:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে “জয় বাংলা” স্লোগানটি আমাদের চিরন্তন প্রেরণা। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী গণঅভ্যুত্থানের পর বিদেশি স্লোগান “ইনক্লাব জিন্দাবাদ” প্রচার করছে, যা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটি অন্য কোনো দেশের বিপ্লবী স্লোগান হতে পারে, কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ নয়। আমাদের উচিত নিজেদের ঐতিহ্য, সংগ্রামের ইতিহাস ও ভাষাকে সম্মান করা এবং বহিরাগত প্রভাবকে বর্জন করা।
আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান:
যে কোনো আন্দোলন বা গণঅভ্যুত্থান তখনই সফল হয়, যখন তা সাংবিধানিক ও আইনসম্মত পথে পরিচালিত হয়। যদি কোনো গোষ্ঠী এ ধরনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আইন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা দেশের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করবে। এ কারণে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়।
নতুন আশার পথে সংবিধানের আলোকে এগিয়ে যাওয়া:
গণঅভ্যুত্থান আমাদের নতুন আশা ও স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশের মানুষ চায় সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। কিন্তু এর জন্য কোনো বিশৃঙ্খলা নয়, বরং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পথেই আমাদের অগ্রসর হতে হবে।
আমাদের কর্তব্য হবে এই গণআকাঙ্ক্ষাকে একটি গঠনমূলক রূপ দেওয়া, যাতে দেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও সামাজিক স্থিতিশীলতা অক্ষুণ্ণ থাকে। জাতিকে নতুন করে বিভ্রান্ত করা নয়, বরং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখা এবং একটি সুসংগঠিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
শেষ কথা: জাতির প্রতি আহ্বান:
আমাদের উচিত গণঅভ্যুত্থান বা আন্দোলনের নাম দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত না করা। আমরা যারা বাংলাদেশের নাগরিক, আমাদের জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং আইনসম্মত প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। একটি দেশের স্বাধীনতা একবারে অর্জিত হয়, এবং তা একবারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে, যাতে আগামী প্রজন্ম শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে।
তাহলে, সকল প্রকার বিভ্রান্তি এবং রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, আমরা আমাদের দেশের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি উন্নত ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।
Like this:
Like Loading...
Related